শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা। ডিজিটাল এই মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো স্থানে আক্রমণ করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তিতে এগুলেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বরং সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল (শনিবার) রাজধানীতে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস-২০১৬’ উপলক্ষে গুলশানের একটি ক্লাবে দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ‘সাইবার নিরাপত্তা-পূর্বাভাস; প্রস্তুতি; সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (আই-সাকা) ঢাকা শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা শাখার প্রথম সভাপতি আলী আশফাক। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, আইসাকা ঢাকার শাখা সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ একেএম নজরুল হায়দার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলফিকার আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রধান ড. তৌহিদ ভূইয়া, আইসাকা’র ঢাকা শাখার সেক্রেটারি ওমর ফারুক খন্দকার, গ্রামীণফোনের ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান শাহাদাত হোসাইন, ইনফরমেশন সিস্টেমস সাইবার অ্যাওয়ারনেসের বাংলাদেশ শাখার (আইএসএসএ) সভাপতি এমআর মারুফ আহমেদ ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ । বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, গত মাসের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৩২ লাখ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারেরই কাজ নয়, বরং নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মূলত ইন্টারনেট জগতের কোনো বর্ডার (সীমানা) নেই এবং এখানে কারো একক মালিকানাও নেই। পুরো পৃথিবী এক। সুতরাং বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা ব্যাপক। পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে আক্রমণ করা সম্ভব। তাই সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি খুব জরুরী। আলী আশফাক বলেন, সাইবার স্পেসে কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। সবাই সাইবার ঝুঁকির মধ্যে। তাই সাইবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন হবার আহ্বান জানান তিনি। নজরুল হায়দার বলেন, বিশ্বে প্রথম একটি মাত্র দেশ নিজেদের ডিজিটাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ২০০৮ সালে এবং সেটি হলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়েছে ২০১৫ সালে। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েও মূলত সে তুলনায় আমরা সাইবার নিরাপত্তায় বেশি দূর এগুতে পারিনি। তিনি বলেন, শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নয়। প্রত্যেক মানুষই সাইবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একজন কৃষক যেমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তার মোবাইলে একজন সাইবার অপরাধী কোনো ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর মাধ্যমে ফাঁদ পাতলো এবং ওই কৃষক অসচেতনতার কারণে সেই ফাঁদে পা দেয়ার মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্টের সব টাকা চলে যেতে পারে। নজরুল হায়দার বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে পাশের দেশগুলোর তুলনায় এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে সবাই সম্মিলিতভাবে সামনে অনেক কাজ করতে হবে। ২০০৪ সাল থেকে আমেরিকা, ২০১১ থেকে নরওয়ে এবং ২০১২ থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ অক্টোবরকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করে আসছে। সাইবার দস্যুতা থেকে নিরাপদে থাকতে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি নেওয়া হয় এ মাসে।